সংক্ষিপ্ত শব্দাবলী

জীবনচরিত

১৯৫৬ – বর্তমান

প্রতিষ্ঠাতা

ইলিয়াস কাঞ্চন

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক সুরক্ষায় বিশেষত মানুষের কল্যাণে নিবেদিত অলাভজনক, অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থা নিরপাদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ১৯৯৩ সালের ২২ শে অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের দুঃখজনক মৃত্যুর পরে ১৯৯৩ সালের ১লা ডিসেম্বর এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখটি এখন বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ১৯৫৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার গ্রাজুয়েট হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। বাবা মরহুম হাজী আব্দুল আলী, মা মরহুমা স্বরুপা খাতুন। মেয়ে ইশরাত জাহান ইমা, ছেলে মিরাজুল মঈন জয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন তার দুই বোন পাকিস্থান বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন। ১৯৭৭ সালে পরিচালক সুভাষ দত্ত পরিচালিত ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রযোজিত “বসুন্ধরা” ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন।

শিল্পীজীবনঃ ৩৫০টিরও বেশী ছবিতে অভিনয় করেছেন, বসুন্ধরা, ভেজা চোখ, সহযাত্রী, নীতিবান, আঁখি-মিলন, প্রেম-প্রতিদান, মাটির কসম, বেদের মেয়ে জোসনা, পরিনিতা (জাতীয় পুরস্কার) শাস্তি (জাতীয় পুরস্কার), সিপাহী, কলমিলতা (মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক) উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন টেলিফিল্ম, নাটক ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে বৈশাখী টিভিতে তার উপস্থাপনায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ অনুষ্ঠানটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তিনি একজন সফল পরিচালক। পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে- বাবা-আমার-বাবা, মায়ের-স্বপ্ন উল্লেখযোগ্য।

সামাজিক কার্যক্রম

নিরাপদ সড়ক চাইঃ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এ দীর্ঘ ২৬ বছরের অধিক সময় নিরলস কাজ করছেন। এই সংগঠন এর দেশে-বিদেশে ১১৫ এর বেশী শাখাতে সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস স্বীকৃতি দিয়েছে যা দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে। তার প্রস্তাবিত ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণার বিষয়টি জাতিসংঘের বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছরে দেশের প্রতিটি অঞ্চলসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সকলকে সচেতন করে আসছেন। ২০১৪-১৫ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক কনসালটেন্ট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য-সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রোড সেফটি এডভাইজরী কমিটির সদস্য পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এস.এস.সি পাশ বেকার যুবকদের জন্য নিসচা ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে ৫০০ এর অধিক এসএসসি পাশ বেকার যুবকদের বিনামুল্যে গাড়ি চালনা পেশায় প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে চাকুরিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় গিয়ে প্রায় ১২,০০০ গাড়ী চালককে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়ে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিমুলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে জনসভার মাধ্যমে সকল শ্রেণীর জনগণকে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ও প্রতিকার সর্ম্পকে সচেতন করছেন।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা, মানসঃ ১৯৮৮ সাল থেকে মানসের মহাসচিব হিসেবে দেশের যুব সমাজকে মাদকাসক্ত ও নেশার কবল থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছেন।

এসিড সার্ভাইভার ফাউন্ডেশনঃ নারী সমাজের উপর এসিড নিক্ষেপের ভয়াবহতা ও আইন সর্ম্পকে বিভিন্ন চ্যানেলে টকশোসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি করছেন যার ফলে দেশে এসিড নিক্ষেপের মত নিকৃষ্ট কাজ অনেক কমে গিয়েছে। তিনি এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

অন্যান্য কার্যক্রমঃ পাবনার সুজানগরে জাহানারা কাঞ্চন উচ্চ-বিদ্যালয়, বরিশালে চাঁদপাশা স্কুল ও কলেজ, কিশোরগঞ্জে জানে-জাহান মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, অনলাইন পত্রিকা ‘নিরাপদ নিউজ.কম’ এর প্রধান সম্পাদক। বিভিন্ন সময় বন্যার্তদের সাহায্য, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতিসংঘের নিকট বক্তব্য ও সাহায্য সহযোগিতা করেন।

সামাজিক স্বীকৃতিঃ ১৯৮৬, ২০০৫-এ জাতীয় চলচিত্র, ১৯৮৬, ১৯৯৬-এ বাচসাস, সিঙ্গাপুরে ফুজি ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড, রোটারী এ্যাওয়ার্ড, শেরে বাংলা এ্যাওয়ার্ড, ঢাকা সিটি কার্পোরেশন স্বর্ণপদক, চেম্বার অব কমার্স এ্যাওয়ার্ড, চলচিত্র প্রযোজক এ্যাওয়ার্ডসহ শতাধিক পুরষ্কারে ভূষিত হন।

বিদেশ ভ্রমণঃ হজব্রত পালনসহ আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালী, জাপান, দুবাই, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্থান, নেপাল, ভারত উল্লেখযোগ্য।

নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠার কারণ

জাহানারা কাঞ্চন

একজন মহিয়সী নারী জাহানারা কাঞ্চন। স্বচ্ছ জীবনবোধ আর দুরদর্শী চিন্তা চেতনার অধিকারিণী এই নারী আজ বাংলাদেশে একটি আন্দোলনের পটভূমি। একটি ইতিহাস। অথচ জীবনটা ছিল তাঁর সাদামাটা। কিন্তু মেধা ও মননে ছিলেন অনন্য উচ্চতার একজন মানুষ। ১৯৬৪ সালের ৩ মার্চ জন্ম তাঁর ঢাকার (পুরান ঢাকা) লক্ষ্মীবাজারে মুসলিম এক সম্ব্রান্ত পরিবারে। বাবা আবদুল হাফিজ ছিলেন ব্যবসায়ী ও এলাকার জনপ্রতিনিধি। মা নুরবানু গৃহিনী। বাবা এবং মায়ের সাহচর্যে সাংসারিক গুণাবলী যেমন ধারণ করেছেন তেমনি দৃঢ়চেতা মনোবলের অধিকারী ছিলেন। ৫ ভাই ও ৭ বোনের ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৮ম। ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল থেকে ১৯৮০ সালে সালে এসএসসি পাশ করেন। এইচএসসিতে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এসএসসি পাশের আগে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুধু এসএসসির গন্ডি পেরিয়ে আর এগুতে পারেননি সংসার, সন্তান ও স্বামীর পেশার প্রতি মনযোগী হতে গিয়ে।

 

১৯৬৪-১৯৯৩

১৯৭৯ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়েটা পারিবারিকভাবে নির্ধারিত থাকলেও দুই বছর নিজেদের আর জেনে নিয়েই বিয়ে করেন তারা। তখন জাহানারা কাঞ্চন ছিলেন দশম শ্রেনীর ছাত্রী। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর গাইড লাইন হিসেবে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ছিলেন স্বামীর ছবির প্রকৃত সমালোচক। কোন ছবি ইলিয়াস কাঞ্চন পর্দায় দেখা মিস করলেও তিনি করতেন না। খুঁটে খুঁটে তিনি স্বামীর ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, কি করা উচিত ছিল সেটাও ধরিয়ে দিতেন। এককথায় বলা চলে আজকে ইলিয়াস কাঞ্চনের যে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার সেই ক্যারিয়ার গঠনের অন্তরালের কারিগর ছিলেন জাহানারা কাঞ্চন। স্বামীর প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল বলা চলে। অসম্ভব ধৈর্য্যশক্তি ও মানসিক মনবলের অধিকারী ছিলেন। বিপদে বিচলিত না হয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই নারী ইলিয়াস কাঞ্চনকে গড়ে নিয়েছেন সব মানুষের ভালবাসার একজন তারকা হিসেবে।

স্বামীর বিপদে পাহাড়সম ধৈর্য্য নিয়ে বলা চলে প্রায় পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করে এনেছেন দুরদর্শী চিন্তা দিয়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় ইলিয়াস কাঞ্চন গুরুতর আহত। ডাক্তারের সিদ্ধান্ত পা কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু জাহানারা কাঞ্চন সেই সিদ্ধান্তে একমত না হয়ে বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে আমি আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে চাই না, প্রতিদিন লাশ হয়ে বেঁচে থাকতে দিতে চাই না, একটি মানুষের জীবনে পঙ্গুত্ব কত বড় অভিশাপ সেটা যেন আমার স্বামীকে কুরে কুরে না খেতে পারে- তারজন্য পা কাটা হবে না। এতে তার জীবন বিপন্ন হলে ক্ষতি হবে আমার, আমার সন্তানের। কিন্তু পঙ্গু স্বামী আমি দেখতে চাই না। আমি তাঁকে সর্বস্ব দিয়ে বিদেশে নিয়ে যাবো চিকিৎসা করাতে। জাহানারা কাঞ্চনের এই দৃঢ়চেতা মনোবলের কাছে ডাক্তারদের হার মানতে হয়। ইলিয়াস কাঞ্চনকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুর। দীর্ঘ তিনমাস চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। প্রমাণিত হয় জাহানারা কাঞ্চনের ভালবাসার বন্ধন কত সুদৃঢ়। এই ভালবাসার পথ বেয়ে জীবন এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের ঘরে দুটি সন্তান- কন্যা ইশরাত জাহান ইমা ও ছেলে মিরাজুল মইন জয়। কিন্তু নিয়তির কি অমোঘ বিধান! এই সুখ বেশিদিন টিকলো না। স্বামী সুস্থ হওয়ার পর একসাথে হজ্ব করে আসার চারমাসের মাথায় ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীকে চমকে দিতে স্বামীর শুটিং স্পট বান্দরবান যাচ্ছিলেন, কিন্তু পুরো দেশবাসীকে চমকে দিয়ে, সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের এই অসময়ে চলে যাওয়ায় অবুঝ দুটি সন্তানকে নিয়ে শোকসাগরে ইলিয়াস কাঞ্চন। চারদিকে অন্ধকার নেমে এলো। কূলকিনারা কি হবে? চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে দিবেন? কি করবেন? ভেবে দিশেহারা। এইসময়ে পথপ্রদর্শক হলেন শুভাকাঙ্খীরা। তাদের পরামর্শে স্ত্রীর জীবন যে অপঘাতে নিভে গেল সেই অপঘাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে স্ত্রী বিয়োগের শোককে শক্তিতে পরিণত করে নেমে পড়লেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে। সেই আন্দোলন আজ তাঁর (জাহানারা কাঞ্চন) তৃতীয় সন্তান হিসেবে পুরো বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত। স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালবাসা ইলিয়াস কাঞ্চনকে আজ সারা বিশ্বের সামাজিক আন্দোলনের তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার অন্তরালের মানুষটিই জাহানারা কাঞ্চন।

ইলিয়াস কাঞ্চন ও জাহানারা কাঞ্চনের ভালবাসার গভীরতা কোন গজ ফিতায় মাপার মত নয়। আমাদের সামনে এমন ইতিহাস অনেক আছে। যেমন সঙ্গীতজ্ঞ তানসেন যখন সম্রাট আকবরের দরবারে সুর সাধনায় মগ্ন হতেন তখন বলা হতো তিনি সুরের পথ বেয়ে মৃত স্ত্রীর সাথে মিলিত হতেন। সুর সাধনায় তিনি এতটাই নিমগ্ন থাকতেন যে কোনরকম বাহ্যিক কোলাহল তাকে স্পর্শ করতে পারত না। সুর সাধনা করা ছিল তার কাছে ইবাদতের শামিল। স্ত্রী এবং সুরের প্রতি গভীর মমত্ববোধ তাকে পুরো পৃথিবী জুড়ে মেলে ধরেছিল। একজন সুরসাধক হিসেবে তানসেন ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।

আমরা অতটা দুঃসাহস না দেখালেও এখন দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসায় একজন সুর সম্রাটের জন্ম না হলেও একজন সড়কযোদ্ধার জন্ম হয়েছে। যিনি স্ত্রীর বিয়োগান্তক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। শুধু গড়ে তোলা নয় দীর্ঘ ২৫ বছর এ আন্দোলনকে মেধা ও মননে ধারন করে লালন পালন করে বড় করে তুলছেন। আর সংগ্রাম, সাফল্য, ও গৌরবের অংশ হিসেবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এখন এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

জাহানারা কাঞ্চনের ভালবাসাকে হৃদয়ে ধারণ করে রাজপথ দিয়ে হেঁটে চলা এক যোদ্ধা ইলিয়াস কাঞ্চন। দিনরাত এক করে হাজার হাজার মাইল চষে চলেছেন একটি মানবিক আবেদন নিয়ে- ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। তাঁর ব্রত, তাঁর সাধনা, তাঁর ত্যাগ, তাঁর শ্রম সবই বিনিয়োগ হয়েছে বাংলার সড়ক পথে। ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে এখন স্ত্রী এবং নিরাপদ সড়ক চাই এক আত্মার দুটি সত্ত্বা।  স্ত্রীর ভালবাসাকে পাথেয় করে দুটি সন্তানের পাশে আরেকটি সন্তান জন্ম দিয়ে একই সাথে বড় করে তোলেন তিনটি সন্তানকে। আজ তার কনিষ্ঠ সন্তান নিরাপদ সড়ক চাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সামাজিক আন্দোলনের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সেইসাথে হয়েছেন সামাজিক আন্দোলনের রোল মডেল। এতটা পথ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে রেখে টেনে নিয়ে গেছেন। যা একটি আদর্শ,একটি অধ্যায় হিসেবে দৃষ্টান্তও বটে।

জাহানারা কাঞ্চনের প্রতি ভালবাসার গভীরতায় ইলিয়াস কাঞ্চন পর্দার তারকা ইমেজ ছাপিয়ে এখন হয়েছেন বাস্তবে তারকা। আমরা বলতে পারি সম্রাট শাহজাহান যেমন স্ত্রী মমতাজের প্রতি গভীর ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাজমহল গড়ে তেমনি ইলিয়াস কাঞ্চনও স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সৃষ্টি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সড়কের থাবায় জাহানারা কাঞ্চন বাঁচতে না পারলেও লক্ষ কোটি প্রাণ রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার ব্রত ইলিয়াস কাঞ্চনকে ইস্পাত কঠিন মনের মনবলের অধিকারী করেছে। স্ত্রী জাহানারা শূন্যতা তাঁকে ঘিরে রাখলেও কাজের মাঝে পান তাঁর স্পর্শ। যে কারণে হননি ক্লান্ত, হননি বিরক্ত, হননি হতাশ বরং যখনই কোনো প্রতিকুলতা এসে ভিড় করেছে এমনকি মৃত্যু তাঁর দুয়ারে কড়া নাড়লেও অদম্য মনোবলে এগিয়ে গেছেন, কারণ তাঁর ভেতরের শক্তি জাহানারা কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন ধাপে ধাপে যে পথ পেরুলেন এবং একটি সার্থক যে অধ্যায়ের সূচনা করলেন তা পৃথিবীর বুক জুড়ে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের পথ অনেকটা এগিয়ে দিয়ে গেছেন। যার পুরোটাই জুড়ে আছেন জাহানারা কাঞ্চন। এই মহিয়সী নারী জাহানারা কাঞ্চন সমাজ জীবনে কতটা উদ্দীপনার তা ইলিয়াস কাঞ্চন সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন।

 কার্যক্রম ও সেবা

সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষা

প্রচার এবং অ্যাডভোকেসি

সড়ক নিরাপত্তা গবেষণা

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা

 নেটওয়ার্কিং 

কপিরাইট © ২০২২ নিরাপদ সড়ক চাই। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।

 পরিকল্পনা, ব্র্যান্ডিং এবং প্রযুক্তি সহায়তায়

Rapid Mind Web